টিপাইমুখ বাঁধ |
ভারত বৃহৎ প্রতিবেশী রাষ্ট্র।
কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে ভারতবিরোধিতা প্রবলভাবে রয়েছে। ভারত সেই বিরোধীতাকে সংকীর্ণ ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক রাজনীতি হিসেবে বরাবরই মূল্যায়ন করে আসছে। এ কথা সত্য, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি যেসব দল করে থাকে, তাদের বিরোধীতা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই করা হয়। তবে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ব্যাপক হারে ভারতের আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে। যদিও ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সমর্থন এবং কোটি কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়, সর্বোপরি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য পাকিস্তানের উপর মিত্র বাহিনীরা আক্রমণ করে, কিন্তু স্বাধীনতার অব্যাহতির পর থেকেই ভারত তার আগ্রাসী চরিত্র উন্মোচন করে ফারাক্কা দিয়ে পানি প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে। সম্প্রতি টিপাইমুখ বাঁধের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে পানির উপর ভারতের যে একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ, তা আবারও বজায় রাখার চেষ্টা করছে দেশটি। টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পের নানা দিক এবং ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আত্মসম্মান নিয়ে দাঁড়ানোর প্রশ্ন রেখে আলোচনার সূত্রপাত ঘটে আমার এই প্রতিবেদনটির।
বাঁধের ইতিহাস
ভারতের বরাক নদে আলোচিত টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের আলোচনা শুরু অনেক দিন আগের। ১৯৫৪ সালে প্রথম এ নদে বাঁধ নির্মাণের কথা আলোচিত হয়। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর ভারতের এই অনগ্রসর অঞ্চলের আদিবাসীদের জীবন এবং তাদের কৃষি সেচ সুবিধার জন্য বরাক নদের উপর নেয়া হয় ড্যাম নির্মাণের উদ্যোগ। সিদ্ধান্তের পর ১৯৫৫ সালে বরাক নদে বাঁধ নির্মাণের জন্য মণিপুরের ময়নাধর অঞ্চলকে নির্ধারণ করা হয়। এর পর পরিকল্পনা বদলে ১৯৬৪ সালে নারায়নধর, তারপর ভুবনধরে এ বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়। পরে এ সিদ্ধান্তও বদলে যায়। ১৯৮০ সালে এসে বাঁধের স্থান নির্ধারণ করা হয় টিপাইমুখে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর ১৯৮৫ সালে টিপাইমুখ পাওয়ার প্রকল্পটি আনা হয় ব্রহ্মপুত্র ফান্ড কন্ট্রোল বোর্ডের আওতায়। ১৯৯৩ সালে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে ভারতের কিছু অঞ্চলে বিরূপ প্রভাবের কথা চিন্তা করে তখন থেমে যায় উদ্যোগটি। পরে আবার উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৯৯৯ সালের ৯ জানুয়ারি মণিপুর রাজ্য সরকার টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণে সরকারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে। ২০০৬ সালে বাঁধের ঠিকাদার নির্বাচন করতে বিজ্ঞাপন প্রকাশ পায়। বাঁধের ডিজাইন চুড়ান্ত হয় ২০০৮ সালে। এ বছরের ২৮ জুলাই মণিপুর রাজ্য সরকার বাঁধের নিরাপত্তা ও নির্মাণসামগ্রী আনার জন্য আইন পাশ করে। পাশাপাশি বাঁধ নির্মাণকাজে ব্যবহৃত মনবাহাদুর রোডের প্রতি সাত কিলোমিটার পর পর সামরিক চৌকি স্থাপন করে। এই একই বছরের ২৪ অক্টোবর প্রকল্পটির পরিবেশ ছাড়পত্র দেয়া হয়। এ কাজের জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডারকে দায়িত্ব দেয়া হয়। মাঝে আবারও কাজের বিরতি পড়ে। এখন নতুন করে এই বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে ভারত সরকার। টিপাইমুখ বাঁধ ভারতের ‘বহুমুখী জলবিদ্যুৎ’ প্রকল্পের সেচ ও নদী বিষয়ক উচ্চাভিলাষী ‘জাতীয় নদী সংযোগ প্রকল্প’র অংশ।
বাংলাদেশের স্বার্থ
বরাক নদ ভারতের মনিপুর রাজ্যের কাছার পর্বতে উৎপন্ন হয়ে মনিপুর-আসাম-মিজোরামের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। বাংলাদেশে প্রবেশের আগে ভারতের অমলসিধ নামক স্থানে নদটি সুরমা ও কুশিয়ারা এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে সিলেট জেলার জকিগঞ্জ দিয়ে প্রবেশ করেছে। সুরমা ও কুশিয়ারা হবিগঞ্জের মারকুলির কাছে পুনরায় মিলিত হয়ে কালনী নামে প্রবাহিত হয়েছে। কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে কালনী ঘোড়াউত্রা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়ে মেঘনা নাম ধারণ করে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। বরাক নদের ভারতে প্রবাহিত অংশের দৈর্ঘ্য ৪৯৯ কিলোমিটার। আর বাংলাদেশে এর দৈর্ঘ্য ৪০৩ কিলোমিটার। সুরমা ও কুশিয়ারা পাঁচটি প্লাবনভূমি অতিক্রম করছে, যার অববাহিকায় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ মৎস ও কৃষিভিত্তিক জনবসতি গড়ে উঠেছে।
বাঁধের ফল
- বাংলাদেশের ভেতরে ৩৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ সুরমা এবং ১১০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুশিয়ারার জলপ্রবাহ কমে যাবে। কয়েক বছর পর দুটি নদীই মারা যাবে।
- বাংলাদেশের মোট জলভাগের ৮ ভাগ আসে বরাক নদের প্রবাহ থেকে। এই পানি আসা বন্ধ হয়ে গেলে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৭ জেলা (সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ এবং নেত্রকোনা) মরুভূমিতে পরিণত হবে।
- পরিবর্তন আসবে কৃষিক্ষেত্রে ও জলবায়ুতে সর্বোপরি গোটা ইকোসিস্টেম নষ্ট হয়ে যাবে।
- গ্রীনহাউজ ইফেক্টের আশঙ্কা অনেক বেশি বেড়ে যাবে।
- ভূমিকম্প বেড়ে যেতে পারে আশঙ্কাজনকভাবে।
বাঁধের ক্ষতিকর প্রভাব
টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পের দুটি দিক: এক. শুধু বাঁধ দুই. বাঁধ ও সেচের জন্য ব্যারেজ। শুধু যদি বাঁধ হয় সে ক্ষেত্রে খুব সাধারণভাবে বলা যায়, বর্ষা মৌসুমে পানির প্রবাহ কমবে আর শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ বাড়বে। এই পরিবর্তনে ব্যাপক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে।
‘ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং’ ২০০৫ সালে একটি গবেষণায় উজানে বাঁধ নির্মাণে বাংলাদেশের কী পরিমাণ ক্ষতি হবে, তার বিস্তারিত হিসাব প্রকাশ করে। এর মধ্যে রয়েছেÑ প্লাবনভূমির প্লাবনের ধরন ও পরিমাণ এবং ঋতু বৈচিত্রের উপর প্রভাব। সুরমা ও কুশিয়ারার প্রাকৃতিক পানি প্রবাহ শুষ্ক করায় সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ এবং নেত্রকোনায় ধান উৎপাদন ব্যাহত হবে। শুধু সিলেট ও মৌলভীবাজারেই যথাক্রমে ৩০ হাজার ১২৩ হেক্টর এবং ৫২০ হেক্টর প্লাবনভূমি কমে যাবে। বর্ষায় জলমগ্ন হবে না সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উজানের ৭১ শতাংশ এলাকা। কুশিয়ারা নদীর প্রায় ৬৫ কিলোমিটার এলাকা নদীটির ডান পাশের প্লাবনভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন হবে। কুশিয়ারার বাম তীরের বরদাল হাওড় শুকনো মৌসুমে পুরোপুরি শুকিয়ে যাবে। কাউয়ার দিঘির হাওড় দুই হাজার ৯৭৯ হেক্টর জলাভূমি হারাবে। ফলে সুরমা-কুশিয়ারার-মেঘনা অববাহিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে জলবায়ু, বাস্তুসংস্থান এবং জীবন-জীবিকার ব্যাপক ক্ষতিসাধন হবে। বাংলাদেশে যার প্রভাব হবে আরেকটি ফারাক্কার মতো।
টিপাইমুখ বাঁধ |
ভূমিকম্প উসকে দেবে এই বাঁধ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের যে জায়গায় টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ হচ্ছে, তা বিশ্বের ছয়টি ভয়ংকর ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার একটি। উত্তর-পূর্ব ভারত ছাড়া ক্যালিফোর্নিয়া, মেক্সিকো, তুরস্ক, তাইওয়ান ও জাপান ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। টিপাইমুখ বাঁধের ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে গত ১০০ বছরের মধ্যে ৭-এর অধিক মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে দুটি। এর একটি হয়েছে ১৯৫৭ সালে, টিপাইমুখ থেকে মাত্র ৭৫ কিলোমিটার দূরে। এলাকাটি ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল হওয়ার কারণ হলো, এটি সুরমা-গ্রুপ শিলাস্তর দ্বারা গঠিত। আর এ শিলাস্তরের বৈশিষ্ট্যই হলো অসংখ্য ফাটল ও চ্যুতি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পুরো বরাক অববাহিকায় রয়েছে অসংখ্য ফাটল আর চ্যুতি, যা আবার এই এলাকার নদীগুলোর গতিপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে। প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধের অক্ষটি অবস্থিত হলো বহুল পরিচিত ‘তাইথু ফল্ট’-এর উপর, যা সম্ভাব্য ক্রিয়াশীল একটি ফল্ট। ভূবিজ্ঞানীরা মনে করেন, ভবিষ্যতের যেকোন ভূমিকম্পের এপিসেন্টার হয়ে উঠতে পারে এই অক্ষটি। তাছাড়া ভারত ও মিয়ানমার টেকনোটিক প্লেটের সংঘর্ষের কারণে এলাকাটি পৃথিবীর অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে এরই মধ্যে চিহ্নিত হয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এ ধরণের একটি এলাকায় ১৬৮.২ মিটার উচ্চতার একটি জলধর নির্মাণ করা মানে (জলাধারের উচ্চতা ১০০ মিটারের বেশি হলে রিভার ইনডিউচ্ড সাইসমিসিটির সম্ভাবনা বেশি থাকে) বাংলাদেশ ও ভারতের পুরো এলাকার জন্য আগ বাড়িয়ে অতিমাত্রায় ভয়াবহ ভূমিকম্প ডেকে আনার শামিল।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, একটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় বাঁধের জলধর ভূমিকম্পকে উসকে দেয়। যদি ভূমিকম্পে বাঁধ ভেঙ্গে যায়, তাহলে তাহলে তা ভাটির দেশ বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ সর্বনাশ বয়ে আনবে। কারণ বাঁধ থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে বাংলাদেশের সীমান্ত শুরু। বাঁধ ভেঙে হঠাৎ বন্যা হলে বাংলাদেশের কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে, সে ব্যাপারে স্পষ্ট কোন তথ্য বাংলাদেশের হাতে নেই। বন্যা প্রতিরোধ পরিকল্পনা বা ফ্লাড অ্যাকশন প্ল্যান-৬ (ঋঅচ-৬)-এর আওতায় ১৯৯২-৯৪ সালে একটি গবেষণা চালানো হয়। ওই গবেষণা থেকে বন্যাবিষয়ক ক্ষয়ক্ষতির একটি হিসাব পাওয়া যায়। যদি বাঁধ ভেঙে বন্যা হয়, তাহলে ওই গবেষণার তথ্য অনুসারে, বন্যার পানি ১০ কিলোমিটার গতিবেগের হিসাবে বাঁধ থেকে ৮০ কিলোমিটার থেকে দূরের পার্বত্য উপত্যকা, ১৪০ কিলোমিটার দূরের শিলচর এবং ২০০ কিলোমিটার দূরের অমলসিধ পৌঁছতে স্রোতের বেগ কমে এলেও ২৪ ঘন্টারও কম সময়ে বাঁধের পানি কমপক্ষে ৫ মিটার উচ্চতা নিয়ে হাজির হবে। আর ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পানি তার সর্বোচ্চ উচ্চতা ২৫ মিটারে পৌঁছবে, যা প্লাবনভূমির উচ্চতার চেয়ে ৮ মিটার বেশি উচু। ফলে বাংলাদেশের পাঁচটি প্লাবনভূমিকে ৮ মিটার পানির নিচে তলিয়ে রাখবে ১০ দিন কিংবা তার চেয়েও বেশি।
ভারত চাইলেই বাঁধ নির্মাণ করতে পারে না
প্রথমত. এর ফলে আন্তর্জাতিক নদী আইনের লঙ্ঘন হচ্ছে। বরাক যেহেতু আন্তর্জাতিক নদ, সেহেতু টিপাইমুখ বাঁধ দেয়ার ক্ষেত্রে একক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। আন্তর্জাতিক হেলসিংকি (১৯৬৬) নীতিমালার ৪ ও ৫ অনুচ্ছেদে রয়েছে, ‘প্রতিটি অববাহিকাভুক্ত দেশ, অভিন্ন নদী ব্যবহারের ক্ষেত্রে অন্য দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজন বিবেচনা করবে। অন্য দেশের কোন ক্ষতি না হয়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।’
দ্বিতীয়ত. ভারত বাংলাদেশের ১৯৯৬ সালের গঙ্গা চুক্তিতে শুধু গঙ্গা নদীর পানি ভাগাভাগির কথা বলা হয়নি, অভিন্ন অন্যান্য নদীর কথাও বলা হয়েছিল। চুক্তির ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে দুটি দেশ অভিন্ন নদীর পানি ভাগাভাগির জন্য চুক্তি সম্পাদন করতে একমত হয়েছে। টিপাইমুখ বাঁধ এই চুক্তি বিরোধী।
তৃতীয়ত. ১৯৯২ সালের বায়োডাইভারসিটি কনভেনশন, ১৯৭২ সালের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কনভেনশন, ১৯৭১ সালের ওয়েটল্যান্ড কনভেনশন অনুসারে একতরফাভাবে টিপাইমুখের মত প্রকল্প গ্রহণের অধিকার ভারতের নেই।
চতুর্থত. ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং আশ্বাস দিয়েছেন যে, টিপাইমুখ প্রকল্পে ভারত এমন কিছু করবে না, যার ক্ষতিকর প্রভাব বাংলাদেশের উপর পড়বে।
শেষ কথা
ভারতে টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন হচ্ছে। এই বাঁধের মূল বিষয় সামরিক। বাঁধ থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সামরিক আগ্রসনকে আরো বেশি গতি দেবে। আসামে চলছে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। সেই সঙ্গে আসামবাসী এই বাঁধের বিরুদ্ধে তীব্র গণ-আন্দোলনও জারী রেখেছে। প্রয়োজন সীমান্তের গ-ি পেরিয়ে দুই দেশের সংগ্রামে মিলন ঘটানো। একই সঙ্গে আওয়াজ তোলা দরকারÑ অভিন্ন নদীর অভিন্ন পানি বণ্টন চাই। দেশের সীমানা যেমন কাঁটাতার-পাসপোর্ট দিয়ে পার্থক্য করা যায়, নদীকে সেভাবে বিভাজ্য করা যায় না। যদি উভয় দেশের মানুষ এই আওয়াজ তোলে, তাহলে ক্ষমতায় যারা থাকেন, তাঁদের অবশ্যই নড়েচড়ে বসতে হবে।
সবার আগে দরকার মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার মানসিকতা। যদি ধরেই নেয়া যায়, ভারত বড় রাষ্ট্র; বাংলাদেশের উজানে বাঁধ দিলে বাংলাদেশের কিছু করার নেই। এটা হেরে যাওয়া মানসিকতা, নতজানু চিন্তা। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় রাষ্ট্র। প্রায় একই ধরনের সাংস্কৃতিক ঐক্য এখানেও বিরাজমান। বিপরীতে ভারতের অভ্যন্তরে রয়েছে পাঁচ শতাধিক জাতি-ভাষা-ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর মানুষ, যা দেশটির অখ-তা রক্ষার প্রধান অন্তরায়। বিশেষ করে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দরকষাকষির জায়গায় রয়েছে।
ভারত নৌ ট্রানজিট কোন মাসুল ছাড়াই শুরু করেছে। স্থল ট্রানজিটের ক্ষেত্রে কী হবে, তা এখনও জানা যাচ্ছে না। একের পর এক উলফা গেরিলাদের ভারতের হাতে তুলে দিচ্ছে বাংলাদেশ। তাহলে ভারত কেন এ ধরনের আচরণ করবে? বাংলাদেশ থেকে সবকিছু নিয়ে বিনিময়ে কিছুই দেবে না, এটা হতে পারে না। বাংলাদেশকে বুক টান করে দাঁড়াতে হবে। দেশের স্বার্থ রক্ষার্থে ভূ-কৌশলগত অবস্থানের বিষয়টি ভারতকে মনে করিয়ে দিতে হবে। ভারত তার নড়বড়ে অবস্থানের বিষয়টি অন্যদের তুলনায় খুব ভালো করেই জানে। কিন্তু এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের অবস্থান স্পষ্ট নয়। সরকারের উচিত বিরোধী দলের সাথে কাঁদা ছোড়াছোড়ি খেলা বাদ দিয়ে দেশের স্বার্থে একসাথে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেয়া। অন্যদিকে এতবড় এই ইস্যুটি নিয়ে বিরোধী দলগুলোরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়া আবশ্যক।
মন্তব্য